স্বদেশ ডেস্ক:
হিনডেনবার্গের রিপোর্টের পর থেকে ক্রমাগত পড়ছে আদানি গ্রুপের শেয়ারের দর। গত এক সপ্তাহে বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে ভারতীয় এই শিল্পগোষ্ঠী।
বুধবার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের দিনেই নতুন শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া (এফপিও) বাতিল করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০ হাজার কোটি টাকার ওই এফপিও বাতিলের পর তাদের শেয়ারের দর আরো নেমে গিয়েছে।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে খভারতীয় এ শীর্ষ কোম্পানির বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এ সময়ে প্রায় প্রায় আট লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে গৌতম আদানি পরিচালিত এ শিল্পগোষ্ঠীর।
এফপিও বাতিলের পর বৃহস্পতিবারের পরিসংখ্যান বলছে, নতুন করে শুধু আদানি গোষ্ঠীর মূল সংস্থা ‘আদানি এন্টারপ্রাইজের’ শেয়ারের দর পড়েছে ১০ শতাংশ।
যদিও বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ‘আদানি এন্টারপ্রাইজের’ শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দর পড়তে শুরু করে। গত ৯ দিনে তাদের শেয়ারের দাম ৩৮ শতাংশ কমেছে।
একইভাবে আদানি গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দামও বৃহস্পতিবার অনেকটা কমেছে। ‘আদানি টোটাল গ্যাস’, ‘আদানি পোর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল ইকোনমিক জোন’, ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’ এবং ‘আদানি ট্রান্সমিশনের’ শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ করে কমেছে।
পরিসংখ্যন বলছে, গত ২৪ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শেষ নয় দিনে এই সংস্থাগুলোর শেয়ারের দর কমেছে যথাক্রমে ৫১ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ, ৪০ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ।
‘আদানি পাওয়ার’ ও ‘আদানি উইলমারের’ শেয়ারের দাম বৃহস্পতিবার নতুন করে কমেছে ৫ শতাংশ করে। এছাড়া গত নয় দিনে তাদের শেয়ারের দাম কমেছিল ২৩ শতাংশ করে।
গত সপ্তাহেও বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় আদানি ছিলেন তৃতীয় স্থানে। ফোর্বসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বৃহস্পতিবার এই তালিকায় আদানির অবস্থান ১৬ নম্বরে গিয়ে ঠেকেছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইতিমধ্যে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে দেশের অন্য ব্যাংকগুলোর কাছে ঋণের পরিসংখ্যান চাওয়া হয়েছে। আদানি গ্রুপকে কোন ব্যাংক কত টাকা ধার দিয়েছে তার খুঁটিনাটি তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আর্থিক সমীক্ষক সংস্থা ক্রেডিট লায়োনাইস সিকিউরিটিস এশিয়ার (সিএলএসএ) ধারণা, ২০২২ সালে আদানি গ্রুপের সামগ্রিক ঋণের পরিমাণ দু’লাখ কোটি টাকা। যার অন্তত ৪০ শতাংশ ভারতীয় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নেয়া হয়েছে।
বিপর্যয়ের মুখে আদানি গ্রুপ জানিয়েছে, তাদের উপর বিনিয়োগকারীদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। যদিও তবে বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। হু হু করে নেমেই চলেছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর।
আমেরিকার বিনিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা হিনডেনবার্গ রিসার্চ গত সপ্তাহে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে আদানিদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ আনে। তারপর থেকেই তাদের শেয়ারবাজারে ধস নামে।
হিনডেনবার্গের অভিযোগ, কারচুপির মাধ্যমে ধনী হয়েছেন আদানি। তারা কৃত্রিমভাবে তাদের শেয়ারের দর বাড়িয়েছেন। এভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।
হিনডেনবার্গের রিপোর্টের পাল্টা ৪১৩ পৃষ্ঠার জবাব দিয়েছে আদানি গ্রুপ। সেখানে খুঁটিনাটি উল্লেখ করে আত্মপক্ষ সমর্থনের একাধিক যুক্তি দিয়েছে ভারতের এ শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী। কারচুপির যাবতীয় অভিযোগই নাকচ করে দিয়েছে তারা।
আদানিদের দাবি, হিনডেনবার্গের রিপোর্ট ভারতের উপর পরিকল্পিত হামলা। এর নেপথ্যে রয়েছে ষড়যন্ত্র। কিন্তু আদানিদের জবাবের পরেও শেয়ারবাজারে তাদের অবস্থানের কোনো উন্নতি হয়নি।
সূত্র : আনন্দবাজার